ভালোবাসা দিবসে ৪০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি


deshlive প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২৪, ৮:২৩ পূর্বাহ্ন /
ভালোবাসা দিবসে ৪০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি

বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাভার উপজেলার শ্যামপুর, সাদুল্লাহপুর, বাগনীবাড়ী, কালিয়াকৈরসহ ৮ থেকে ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার ফুলচাষি। বাড়তি দাম ও ভালো ফলনের আশায় দিনভর বাগানে সেচ, সার, নিড়ানিসহ নানা পরিচর্যা করছেন তারা।

সাভার উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বিরুলিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে নানা প্রজাতির গোলাপ, গ্লাডিওলাস, গাঁদাসহ নানা প্রজাতির ফুল চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে ২৩০ হেক্টর জমিতে শুধু গোলাপ ফুলের চাষ হয়। চলতি মৌসুমে প্রায় ৩৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

যতদূর চোখ যায় লাল গোলাপের বিস্তৃত বাগান। সবুজের মাঝে ফুটে থাকা রাশি রাশি লাল রঙের গোলাপ যেন প্রকৃতিকে দিয়েছে অপরূপ সাজ। ভালোবাসা দিবস আর পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে সাভারের গোলাপ গ্রামে হাজারও দর্শনার্থী ভিড় জমাচ্ছেন। সব বয়সী মানুষের আগমনে মুখর হয়ে উঠেছে গোলাপ গ্রাম। গোলাপ খেতের মধ্যে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেকে। দিনভর ঘোরাঘুরি করে বাগান থেকে কম দামে তাজা গোলাপ আর বাহারি ফুল দিয়ে তৈরি মাথার রিং কিনতে পেরে দারুণ খুশি দর্শনার্থীরা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনন্যা বণিক বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বন্ধু মিলে গোলাপ গ্রামে বেড়াতে এসেছি। এখানকার সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত করেছে। পয়লা ফাল্গুনের মৃদু হাওয়া প্রকৃতির এই সৌন্দর্যকে বাড়িয়েছে কয়েক গুণ। গাছে গাছে গজিয়ে ওঠা নতুন পাতা বলে দিচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি এখানে কম দামে বাগান থেকে তাজা গোলাপ কিনতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমরা দিনভর ঘোরাঘুরি করে বিকেলে ক্যাম্পাসে ফিরে যাব।’

সাব্বির আহমেদ নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, ‘হেমায়েতপুর থেকে গোলাপ গ্রামে এসেছি। যতদূর চোখ যায় লাল রঙের গোলাপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।’

শ্যামপুর গ্রামের ফুলচাষি মনির হোসেন বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে বাগানে গোলাপ করে আসছি। প্রায় তিন বিঘা জমিতে এবার গোলাপ চাষ করেছি। এতদিন প্রতিটি গোলাপ ফুল পাইকারি দামে ৭ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ প্রতিটি গোলাপ ২০ টাকায় বিক্রি করব। বাজারে এই ফুল বিক্রি হবে ৫০ টাকায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার অনেক বাগানে গোলাপের কলিতে মড়ক দেখা দিয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমারসহ বেশির ভাগ চাষির বাগানে ভালো ফলন হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ভালোবাসা দিবসে যেন বাগানে ফুলের ভালো ফলন হয়, সে জন্য নিয়মিত বাড়তি পরিচর্যা করেছি। তিন বেলা বাগানে পানি, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছি।’

মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা গোলাপচাষি আছি তাদের ফুলগুলো যদি সরকারিভাবে বিদেশে রপ্তানি করা যেত, তাহলে আরও বেশি লাভবান হতে পারতাম। আমাদের গোলাপ গ্রাম থেকে বিমানবন্দরও অনেক কাছে, সে ক্ষেত্রে সরকার এ বিষয়ে নজর দিলে এখানকার ফুলচাষিরা আর্থিকভাবে আরও লাভবান হতাম। এ ছাড়া সরকারিভাবে স্থানীয় একটি বাজারে ফুল বিক্রির কথা থাকলেও সেটাও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।’

বাগনীবাড়ী এলাকার ফুলচাষি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার মতো গোলাপ গ্রামের অনেকেই বাগানের পাশে খুচরা ফুল বিক্রির জন্য ছোট দোকান দিয়েছেন। ভালোবাসা দিবস এলে এসব দোকানে ফুল বিক্রি অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরাই মূল ক্রেতা। কয়েক দিন আগে ৫ থেকে ৭ টাকায় প্রতিটি গোলাপ বিক্রি করেছি। বছরের অন্য সময় ৩ থেকে ৪ টাকা দরেও প্রতিটা গোলাপ বিক্রি করেছি। তবে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গোলাপের বাজার অনেক চড়া। গতকাল খুচরা দোকানে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় প্রতিটা গোলাপ বিক্রি হয়েছে। আজ গোলাপের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা হতে পারে। এ ছাড়া আমাদের বাগানের তাজা রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাসসহ অন্য ফুলের দামও ভালো পাচ্ছি। ফুল দিয়ে তৈরি মাথার রিংগুলো এখন আগের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছি। আগে যেখানে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতাম। এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছি।’

সাভার উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিরুলিয়া ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে গোলাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ হয়ে থাকে।

এর মধ্যে প্রায় ২৩০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে গোলাপের ভালো ফলন হওয়ায় প্রায় ৩৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশপাশি গোলাপ গ্রামের চাষিদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে কৃষি অফিস সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’

দেশ লাইভ/স্বজন